মনশান্তরাখার_পদ্ধতি
~~~
স্বামী যতীশ্বরানন্দ :—
চঞ্চল মনকে নিয়ন্ত্রণে এনে একমুখী করা সবচেয়ে দুরুহ ব্যাপার ৷ ছাত্রাবস্থায় আমাদেরই একজন স্বামী ব্রহ্মানন্দের নিকট অনুযোগ করে, “আমার মন এখনো চঞ্চল । কেমন করে তা শান্ত করা যায় ? মনে হয় এজন্য আমার সকল সংগ্রামই ব্যর্থ হয়েছে । এখন এ সকল আমার কাছে অবাস্তব বলে মনে হচ্ছে ৷”
উত্তরে স্বামী ব্রহ্মানন্দ বলেন : “এতে দুঃখ করার কোন কারণ নেই ৷ ধ্যানের ফল অবশ্যম্ভাবী আর যদি ভক্তি ও বিশ্বাস সহকারে জপ ধ্যান কর তবে ফল লাভ হবেই ৷
সবচেয়ে সহজতম ধ্যান, যেমন কোন দেবতার নাম উচ্চারণ করার অভ্যাসও যদি নিয়মিত করতে পার তবে নিশ্চয়ই মনে শান্তি পাবে ৷
প্রাথমিক পর্যায়ে ধ্যান করা যেন মনের সঙ্গে যুদ্ধ করা ৷ অশান্ত মনকে সংযত করে ইষ্টের পায়ে লগ্ন করা প্রচন্ড আয়াসসাধ্য ৷ প্রথম প্রথম সতর্ক থেকো যেন ধ্যান করতে গিয়ে মস্তিষ্কের উপর বেশি চাপ না পরে ।
নিয়মিত অভ্যাসে ক্রমে ক্রমে ধ্যানের মাত্রা দীর্ঘ করতে পারলে মনের স্থৈর্য আসে এবং তখন বেশি সময় ধ্যান করলেও ক্লান্তি বোধ হয় না ৷ এতে স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় এবং গভীর নিদ্রার পর দেহ ও মনে যেমন সাচ্ছন্দ্য ফিরে আসে সেই রকম স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হবে । ক্রমে গভীর আনন্দের অনুভূতি লাভ করবে ৷
দেহ অসুস্থ হলে মনেরও বিশৃঙ্খলা ঘটে ৷ সুতরাং শরীর সুস্থ রাখার জন্য পথ্য গ্রহণে বিশেষ সতর্ক হওয়া দরকার ৷ ধ্যানের জন্য মনের একাগ্রতা আবশ্যক ৷ অধিক পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করলে মনের জড়তা আসে ৷ মানসিক স্থৈর্য বজায় রাখতে সবরকম আবেগ বা আসক্তিকে সংযত রাখবে ৷ ধ্যান না করলে মনকে স্ববশে রাখতে পারবে না, আর মনকে স্ববশে না রাখলে ধ্যান করাও হয়ে উঠবে না ৷
যদি মনে কর প্রথমে মনকে বশে আনার কৌশল আয়ত্ত করি, পরে ধ্যান অভ্যাস করব তবে অধ্যাত্ম জীবনের পথও খুঁজে পাবে না ৷ মনকে বশে আনা ও ধ্যান করা দুটো কাজই এক সঙ্গে চালিয়ে যেতে হবে ৷ সুতরাং মন সংযত কর আর ধ্যান করতে থাক ৷”