স্বামী প্রেমেশানন্দজীর পত্র-সংকলন হইতে :~~~~~~~~~
তোমার মনের অস্বস্তির কোন হেতু খুঁজিয়া পাইলাম না ৷ তুমি স্বাধীন স্বতন্ত্র ৷ তোমার যেমন রুচি, যেমন প্রকৃতি, যেমন অবস্থা তুমি তেমনই চলিবে ৷ অন্যেরা যদি খুশি না হন, তা তাঁরা বুঝুন ; যদি তোমার সঙ্গে না পোষায়, সরে পড়ুন ৷ পাড়ার লোককে খুশি করিবার জন্য কেউ জন্মায় না — সবাই স্বাধীন, নিজের সখে নিজের পথে সবাই চলে, পরের মুখ চেয়ে কে চলে বল ! তুমি ‘খামকা’ ঐ তুচ্ছ বিষয় ভাবিয়া মন খারাপ করো না ৷
এখানে একটি লোক আছে ; সে বিলাপী ও বিষাদী ছিল ৷ অর্থাৎ তার ত্রুটি বিচ্যুতির জন্য সর্বদা বিষণ্ণ থাকিত ও বিলাপ করিত ৷ তাহাকে আমি সদাই বলিতাম, “তুমি আপন মনে চল ; তুমি যা পার যেটুকু পার তাতেই খুশি থাক ৷” বলিতে বলিতে তার বিষাদ দূর হইয়াছে ৷ তুমি কেন যে মন খারাপ কর বুঝি না ৷ “ভাল হতো আরও ভাল হলে ?” আমি তো তোমার মতো ভাল লোক আর কাহাকেও দেখি না, তোমার কোথায়ও খুঁত খুঁজিয়া পাই না ৷ ওহে মানুষ তো দেবতা নহে ৷ আমরা মানুষকে মানুষরূপেই ভালবাসি তার শত দোষ-ত্রুটি সহ ৷
ঐ যে ঠাকুর ঘরে যাওয়া, ধ্যান করা, ঐ যে স্বামীজীর বই পড়া, গীতা মুখস্থ করা ওসব নিয়ে তুমি একটুও ভাবিও না ৷ সময় হলে হবে ৷ যদি ও-সব নাই বা হয় তাতে ক্ষতিটা কী ? কয়টা লোকে ওসব করে ? আমরা সন্ন্যাসীরাই করি না ৷ আর তুমি তো কচি খোকা ৷
তুমি মন হইতে সকল দুঃখ বেদনা দূর করিয়া প্রসন্ন হও ৷ সব তাতে হাসিতে শিখ ৷ আমেরিকাতে এক ধর্ম সম্প্রদায় আছে ; তারা habit of happiness অভ্যাস করে ৷ তারা সব অবস্থাকে প্রসন্নচিত্তে গ্রহণ করে ৷ ধর্ম সাধনার মূল ঐ তিতিক্ষা — সকল দুঃখ প্রসন্ন চিত্তে গ্রহণ করা ৷ “সহনং সর্বদুঃখানাম্ অপ্রতিকারপূর্বকং চিন্তাবিলাপরহিতং” — হও ৷ তোমার মুখে সর্বদা হাসি দেখিব ৷ মুখ ভার করা একেবারেই খারাপ ৷
পূর্বে ছিল, ‘ব্রাহ্মণ সেবা’, ‘সাধু সেবা’ এখন ‘জীব সেবা’ ৷ “সর্ব জীবের ভিতরে শিব আছেন” জেনে সকলকে আমরা সেবা করি ৷ কারণ গীতা বলেন, “সাধুষ্বপি চ পাপেষু সমবুদ্ধির্বিশিষ্যতে” — সাধু ও পাপীকে সমান দেখাই প্রকৃত দেখা ৷ কে সাধু আর কে অসাধু, আমার জানবার দরকার নাই ৷ আমি জানি — “ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং হৃদ্দেশে-অর্জুন তিষ্ঠতি ৷” হরি হরি বল ৷