স্বামী প্রেমেশানন্দজীর পত্র-সংকলন হইতে :~
~~~~~~~~
মানবজীবন একটি অতি রহস্যময় জিনিস ৷ আমরা ইহা নিয়া দিনরাত ব্যস্ত আছি ৷ কিন্তু ইহার রহস্য কিছুই জানি না ৷ ইহার উপর কিছুমাত্র কর্তৃত্ব আমাদের নাই ৷ কিন্তু এই বিষয় মানুষের সর্বাগ্রে জানা উচিত ৷ অধিকাংশ দুঃখই নিজের বিষয় না জানা হইতে আসে ৷
ধার্মিকরা স্থুলবুদ্ধি মানুষকে এই রহস্য বুঝাইবার জন্য যেসব উপায় অবলম্বন করিয়াছিলেন তাহাতে মানুষের মঙ্গলের পরিবর্তে অমঙ্গলই বোধহয় বেশি হইয়াছে ৷ আত্মোন্নতির যে সব উপায় ধার্মিকেরা বলিয়া থাকেন, বংশ-পরম্পরা তাহা অভ্যাস করিতে গিয়া মানুষ বিষম কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হইয়াছে ৷ এই একমাত্র ‘রাজযোগ’ই মানুষকে ঐসব ভ্রমের হাত হইতে রক্ষা করিতে পারে ৷
সর্ববিধ জাতীয়, দেশীয় ও ধর্মের সংস্কার হইতে মুক্ত হইয়া সত্যানুসন্ধান করিবার জন্য ‘সন্ন্যাস’ নামক অনুষ্ঠান বেদ বিধান করিয়াছিলেন ৷ সন্ন্যাসী বাঙালি সাহেব বা জার্মান নহেন, সন্ন্যাসী হিন্দু বা মুসলমান নহেন — এমন কি মানুষ বা দেবতা নহেন, এইরূপ সাধনা অভ্যাস করিয়া “ক্ষীণসংস্কার” হইলে সত্য তাহার নিকট আপনি উদ্ভাসিত হয় । এই সন্ন্যাস পরিপক্ক করিবার জন্য নির্জনে বসিয়া “অহং ব্রহ্মাস্মি” এই ভাবটি দীর্ঘকাল অভ্যাস করিতে হয় ৷ এই সবই বৈজ্ঞানিক প্রণালী, ইহা কোন ব্যক্তি বা দল বিশেষের খামখেয়ালি নহে ৷
এই সর্বসংস্কারবিমুক্তির সাধনা পুনঃপ্রবর্তিত করিবার জন্য ভগবান সপার্ষদ আসিয়াছেন ৷ ‘পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতম্ ৷’
যেসব কাজকর্মের জন্য আমাদের প্রাণান্ত পরিশ্রম দরকার হইতেছে সেসব কাজ নিরায়াসে করা যাইতে পারে, যদি যোগাভ্যাস করা যায় ৷ যে বিদ্যালাভের জন্য স্কুল-কলেজের এত আড়ম্বর তাহার কিয়দংশ যোগাভ্যাসে ব্যয় করিলে অতি অনায়াসে সে বিদ্যালাভ হয় ৷ তুমি সর্বদা লক্ষ্য করিয়াছ — যে দিন মন প্রসন্ন থাকে, স্থির সুস্থ ভাবে পড়িতে বসা যায়, সেদিন অল্প সময়ে অনেক বিষয় শিক্ষা হয় ৷ ঐ প্রসন্নতা, স্থৈর্য ও সুস্থতা যোগের দ্বারা স্থায়ী করিতে পারিলে সকল কাজই সফল হইতে পারে ৷
মানবদেহে এত ঐশ্বর্য এত আনন্দ আছে যাহা জানিলেও অনেক দুঃখ দূর হয় ৷ শ্রীশ্রীপ্রভু মানবদেহ ধারণ করিয়া মানবদেহকে পরম গৌরবান্বিত করিয়া গিয়াছেন ৷ চেষ্টা করিলে যোগবিভূতি লাভ করিয়া ‘নবযুগ আনয়ন’ রূপ স্বামীজীর স্বপ্ন কার্যে পরিণত করিবার যন্ত্র তুমিও হইতে পার ! জন্ম-জন্মান্তরের দুঃস্বপ্নজাল ছিন্ন করিয়া বাহির হও ৷ জন্ম মরণ উভয়ই স্বপ্ন ৷