Swami Premeshanandaji

স্বামী প্রেমেশানন্দজীর পত্র-সংকলন হইতে :~
~~~~~~~~

তুমি এবার ঠিক বুঝিয়াছ, অন্তর্জগতে প্রবেশ করা দরকার ৷

মনের বার আনা যার অন্তরে নিবদ্ধ থাকে, বাকি চার আনাতে সে সংসার তোলপাড় করিতে পারে ৷

আর যার সকল মনই বাহিরে সে এক বলদের সমান খাটিতে পারে মাত্র ৷

চিদাকাশে অসীম আনন্দের সন্ধান যেদিন তুমি পাইবে সেদিন রামকৃষ্ণের যন্ত্র হইবে ; তার পূর্বে যাহা করিবে বা করিতে চাহিবে তাহা পাগলামি মাত্র জানিবে ৷

Swami Lokeswaranandaji

খুঁটিধরেঘোরা

স্বামী লোকেশ্বরানন্দ :—

আমি দু-জন ডাক্তারকে জানতাম ৷ দু-জনই বড় ডাক্তার ৷ প্রথম জনের একটাই ছেলে ৷ তার বিয়ে দেবেন — তোড়জোড় চলছে ৷ তার প্র্যাকটিসের জন্য চেম্বারও ঠিকঠাক করে রেখেছেন ৷ তা, সেই ছেলে হঠাৎ মারা গেলে সবাই সান্ত্বনা দিতে ছুটে এসেছেন ৷ ডাক্তার কিন্তু তখন ঠাকুর ঘরে বসে আছেন ৷ পরে বেরিয়ে এসে বললেন — আপনারা সান্ত্বনা দিতে এসেছেন, কিন্তু যাঁর জিনিস তিনিই নিয়েছেন ; এতে আর দুঃখ করার কী আছে ?

দ্বিতীয় ডাক্তারের দু-তিনটি ছেলে ৷ একটি ছেলে মারা গিয়েছে ৷ তা, আমার সঙ্গে প্রথম আলাপের দিনেই তিনি বলছেন — বলুন তো, আমাকে আর কতদিন বেঁচে থাকতে হবে ? আর বাঁচার সাধ নেই ৷ জীবনে বিতৃষ্ণা এসে গিয়েছে ৷

দেখুন, প্রথমজন নিয়মিত পূজা-অর্চনা করতেন, ঈশ্বরে তাঁর অনুরাগ ছিল ৷ তাই ভেতর থেকে শক্তি পেয়েছেন ৷ দ্বিতীয় জনের তা ছিল না ৷ তাই শোকে ভেঙ্গে পড়েছেন ৷

শ্রীরামকৃষ্ণ তাই বলছেন — সংসারে আছ, থাকো ; কিন্তু খুঁটি ধরে থাকো ৷ তাহলে অত ব্যথা পাবে না ৷

ঈশ্বরই সেই খুঁটি ৷

Swami Yatiswaranandaji

অমৃতবাণী

“দেহ-মনের উপযুক্ত খাদ্য দাও ৷ মনে রেখো, পেটে কিছু না পড়লে যেমন পেটে ব্যথা শুরু হয় তেমন মস্তিষ্কও উচ্চচিন্তার খোরাক না পেলে অবসন্ন হয়ে যায় ৷

এই পৃথিবী শাশ্বত নয়, নিত্য নয়, ঠিক কথা কিন্তু এরই মধ্যে সেই পরমাত্মা ওতপ্রোত ৷ জীবনটা যেন ‘রঙ্গমঞ্চ’ – আত্মার প্রকৃত আবাস এখানে নয় – তার আবাস, তার আশ্রয় পরমাত্মা স্বয়ং ৷ নিজের মধ্যে সেই পরমাত্মার দিব্য উপস্থিতিকে অনুভব করতে শেখো ৷ জীবন রঙ্গমঞ্চে তোমার যে-ভূমিকা তা সুসম্পন্ন করো ৷ ওই জীবননাট্য অস্থায়ী হলেও তোমার ভূমিকা যথার্থভাবে পালন করলে তোমারই চিত্তশুদ্ধি হবে ৷ সেই চিত্তশুদ্ধি তোমার অধ্যাত্মানুভূতি জাগ্রত করবে – তখন বহুরূপে তোমার সামনে সেই পরমাত্মার অভিব্যক্তি ঘটলে তুমি বহুর মধ্যে তাঁরই পূজা করতে পারবে ৷”

“সর্বদা মনে রাখবে যে শ্রীরামকৃষ্ণ, শ্রীশ্রীমা একই অধ্যাত্মশক্তির দ্বিবিধ প্রকাশ – আমাদের কল্যাণের জন্য, সর্বজীবের কল্যাণের জন্য তাঁদের নরদেহ ধারণ ৷ চিরদিন তাঁদের শরণ নিয়ো ৷ এযুগে তাঁরাই প্রকৃত প্রেরণা ৷ ওই গানটি খুব গাইবে : ‘নাথ তুমি সর্বস্ব আমার’ ৷ যতবার পারো গাইবে ৷”

“মানুষ এক ফোঁটা ভালবাসা দিতে পারে, এক বিন্দু সুখ তাতে পাবে কিন্তু ঈশ্বর ভালবাসার সমুদ্র ঢেলে দেবেন – সেখানে অসীম আনন্দ, শান্তি – তাই ঈশ্বরের কাছে চাওয়াই ভাল ৷”

“এ-জীবনের জন্য কোন ‘ব্লু-প্রিন্ট’ হতে পারে না । জীবনে উত্থানপতনের সম্ভাবনা আছেই । তাই আদর্শ হল কর্ম ও উপাসনা – ‘Work and Worship’ .

স্বামী_যতীশ্বরানন্দজী

Swami lokeswaranandaji

ঈশ্বরের প্রতি যখন অনুরাগ হয় তখনই বোঝা যায় কুণ্ডলিধী জেগেছেন ৷

ধ্যানের সময় খটখট আওয়াজ ইত্যাদি হয়, কারণ সুষুম্না নাড়ির মধ্য দিয়ে বায়ু চলাচল করে কিনা ৷ ঐ সময়ে অনেকের দর্শনাদিও হয় ৷ তবে এসব দিকে বেশি মন দেবার দরকার নেই ৷

সমাধি এবং ব্রহ্মজ্ঞান যুগপৎ একই সঙ্গে হয় ৷

দেহ থাকলে একটু-না-একটু বাসনা থাকবেই ৷ বাসনা না থাকলে দেহ থাকে না ৷ ঠাকুর তাই সমাধি থেকে মনটা নামানোর জন্য বলতেন জল খাব, তামাক খাব ৷ ঐ একটু বাসনা না থাকলে সমাধিমান পুরুষের দেহ থাকে না ৷ ঠাকুরের মতো অবতারাদির কথা আলাদা ৷ সাধারণভাবে বলা হয় জীবকোটির দেহ একুশ দিনের বেশি ঐভাবে থাকে না ৷

তবে যাই হোক, ঐ একটু-আধটু বাসনা, বাসনা নয় ৷ যে ঠিক ঠিক ঈশ্বরকে ভালবেসেছে, তার কামনা-বাসনা এমনিই ভেসে যায় ৷ ঈশ্বর অনুরাগের প্লাবনে সবই খড়কুটোর মতো ভেসে যায় ৷ তখন হলে হলো, না হলে না হলো — এই মনোভাব হয় ৷

আমাদের এই দেহ হলো একটি ‘ভোগায়তন’ ৷ ভোগের জন্য ৷

                            — স্বামী লোকেশ্বরানন্দজী ৷

Letter from Swami Premeshanandaji’s collection

স্বামী প্রেমেশানন্দজীর পত্র-সংকলন হইতে :~
~~~~~~~~

মন কেন তাঁকে চাহে না — যারা চিটে গুড়ের পানা নিয়াই ব্যস্ত তাদের হঠাৎ এক আধ দিন মিশ্রির পানা তেমন প্রিয় বোধ হয় না ৷

‘অভ্যাসেন তু কৌন্তেয় বৈরাগ্যেণ চ গৃহ্যতে ৷” অভ্যাস চাই ৷ যদি সত্যই প্রিয় বোধ হইত তবে আমরা কেন তাঁর চিন্তা নিয়া থাকি না ?

দেখ নাই সুন্দর একটা মানুষ দেখিলে তাঁর কথা কিছুতেই ভুলা যায় না । ঠিক ঠিক প্রিয় বুদ্ধি হলে এই যে আমার মধ্যে আমির ভিতরে নিকটতম অনন্ত আনন্দ সমুদ্র, তাহা পাইতে কি কোন চেষ্টার প্রয়োজন হয় ?

চাই না তাই পাই না ৷ সময় না হলে পাওয়া যায় না ৷ ….সময় না হলে কিছুই হয় না ৷

সময়কে এগিয়ে আনার জন্যই যোগ, কিছু কিছু করিয়া অভ্যাস করিতে হয় — “তস্যাহং সুলভঃ পার্থ নিত্যযুক্তস্য যোগিনঃ ৷”

Swami Yatiswaranandaji

সন্ন্যাসাশ্রম অথবা গার্হস্থ্যাশ্রম — কোনওটাই সর্বাংশে নিখুঁত বা আদর্শ নয় ৷

ঈশ্বরেচ্ছায় আমরা যেখানেই থাকি, সেই আশ্রমের যা-কিছু সর্বোত্তম তাকেই গ্রহণ করব এবং তার সাহায্যেই নিজের জীবনকে উন্নত করে তুলব ৷

কেউ তোমার সমালোচনা করলে তুমি নিরপেক্ষ মনোভাব নিয়ে নিজের আচরণের বিচার করবে ।

যদি তোমারই দোষ চোখে পড়ে তবে তা সংশোধন করা উচিত ৷

আর যদি মনে হয়, সেক্ষেত্রে তোমার কোনও ত্রুটি ছিল না — তবে ওই ব্যাপারে চিন্তা করে অনর্থক সময় নষ্ট কোরো না ৷

শ্রীভগবানের পায়ে সব অর্পণ করে দাও ৷

ছোট-ছোট জিনিস নিয়ে পড়ে থেকো না ৷

কেউ তোমার প্রশংসা করবে, কেউ নিন্দা-সমালোচনা করবে ৷

দুটোই শ্রীশ্রীমাকে অর্পণ করে দাও ৷

                             — স্বামী যতীশ্বরানন্দজী ৷

Swami Gahananandaji

রামকৃষ্ণ শরণম

একখানা ঠাকুরের ছবি কাছে রেখে দেবে।

কাম-কামনাগুলো এলেই ছবিটি চোখের সামনে রাখবে, তাহলে আর ইন্দ্রিয়গুলো এধার-ওধার করতে পারবে না।

সেই ছবি দেখতে দেখতে তোমার মনের কাম-কামনা সব চলে যাবে।

তাঁর ওপর মন থাকলে তবে ওগুলো যায়।

স্বামী অদ্ভুতানন্দজী মহারাজ
(অমৃত বাণী,পৃ:-৩৬০)

“”….বস্তুত শ্রী ভগবান ই প্রকৃত গুরু । তিনি মানুষ গুরুর মাধ্যমে ক্রিয়া করেন । মানুষ গুরু মন্ত্রটি শিষ্যের কানে দেন ।

তারপর শুরু হয় জগদগুরু শ্রী ভগবানের লীলা। তারপর তিনিই ভক্তকে হাত ধরে নিয়ে যান।

মানুষ গুরু মন্ত্র দেন কানে, আর জগদগুরু প্রাণে……..শ্রী ভগবান অবশ্যই তোমাদের মঙ্গল করবেন। তিনি তোমাদের হাত ধরে আছেন।

….গুরুর মাহাত্ম্য আমরা ভুলে যাই । তাই বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে শাস্ত্র আমাদের সেই মাহাত্ম্য স্মরণ করিয়ে দেবার ব্যবস্থা করেছেন।

…… কারণ, তিনি নিজেও যে বলেছেন, যাদের শেষ জন্ম তাদের এখানে আসতেই হবে । তোমরাও আস্থা রাখ, বিশ্বাস কর । বাকিটা তিনি করবেন।

…তোমরা এক পা এগোও, তিনি দশ পা এগিয়ে তোমাদের কোলে তুলে নেবেনই নেবেন ।

ইতি —— স্বামী গহনানন্দ ।

গহন আনন্দ চিন্তন হইতে❤️🙏

Letter from Swami Premeshanandaji’s collection

স্বামী প্রেমেশানন্দজীর পত্র-সংকলন হইতে :~
~~~~~~~~

মানবজীবন একটি অতি রহস্যময় জিনিস ৷ আমরা ইহা নিয়া দিনরাত ব্যস্ত আছি ৷ কিন্তু ইহার রহস্য কিছুই জানি না ৷ ইহার উপর কিছুমাত্র কর্তৃত্ব আমাদের নাই ৷ কিন্তু এই বিষয় মানুষের সর্বাগ্রে জানা উচিত ৷ অধিকাংশ দুঃখই নিজের বিষয় না জানা হইতে আসে ৷

ধার্মিকরা স্থুলবুদ্ধি মানুষকে এই রহস্য বুঝাইবার জন্য যেসব উপায় অবলম্বন করিয়াছিলেন তাহাতে মানুষের মঙ্গলের পরিবর্তে অমঙ্গলই বোধহয় বেশি হইয়াছে ৷ আত্মোন্নতির যে সব উপায় ধার্মিকেরা বলিয়া থাকেন, বংশ-পরম্পরা তাহা অভ্যাস করিতে গিয়া মানুষ বিষম কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হইয়াছে ৷ এই একমাত্র ‘রাজযোগ’ই মানুষকে ঐসব ভ্রমের হাত হইতে রক্ষা করিতে পারে ৷

সর্ববিধ জাতীয়, দেশীয় ও ধর্মের সংস্কার হইতে মুক্ত হইয়া সত্যানুসন্ধান করিবার জন্য ‘সন্ন্যাস’ নামক অনুষ্ঠান বেদ বিধান করিয়াছিলেন ৷ সন্ন্যাসী বাঙালি সাহেব বা জার্মান নহেন, সন্ন্যাসী হিন্দু বা মুসলমান নহেন — এমন কি মানুষ বা দেবতা নহেন, এইরূপ সাধনা অভ্যাস করিয়া “ক্ষীণসংস্কার” হইলে সত্য তাহার নিকট আপনি উদ্ভাসিত হয় । এই সন্ন্যাস পরিপক্ক করিবার জন্য নির্জনে বসিয়া “অহং ব্রহ্মাস্মি” এই ভাবটি দীর্ঘকাল অভ্যাস করিতে হয় ৷ এই সবই বৈজ্ঞানিক প্রণালী, ইহা কোন ব্যক্তি বা দল বিশেষের খামখেয়ালি নহে ৷

এই সর্বসংস্কারবিমুক্তির সাধনা পুনঃপ্রবর্তিত করিবার জন্য ভগবান সপার্ষদ আসিয়াছেন ৷ ‘পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতম্ ৷’

যেসব কাজকর্মের জন্য আমাদের প্রাণান্ত পরিশ্রম দরকার হইতেছে সেসব কাজ নিরায়াসে করা যাইতে পারে, যদি যোগাভ্যাস করা যায় ৷ যে বিদ্যালাভের জন্য স্কুল-কলেজের এত আড়ম্বর তাহার কিয়দংশ যোগাভ্যাসে ব্যয় করিলে অতি অনায়াসে সে বিদ্যালাভ হয় ৷ তুমি সর্বদা লক্ষ্য করিয়াছ — যে দিন মন প্রসন্ন থাকে, স্থির সুস্থ ভাবে পড়িতে বসা যায়, সেদিন অল্প সময়ে অনেক বিষয় শিক্ষা হয় ৷ ঐ প্রসন্নতা, স্থৈর্য ও সুস্থতা যোগের দ্বারা স্থায়ী করিতে পারিলে সকল কাজই সফল হইতে পারে ৷

মানবদেহে এত ঐশ্বর্য এত আনন্দ আছে যাহা জানিলেও অনেক দুঃখ দূর হয় ৷ শ্রীশ্রীপ্রভু মানবদেহ ধারণ করিয়া মানবদেহকে পরম গৌরবান্বিত করিয়া গিয়াছেন ৷ চেষ্টা করিলে যোগবিভূতি লাভ করিয়া ‘নবযুগ আনয়ন’ রূপ স্বামীজীর স্বপ্ন কার্যে পরিণত করিবার যন্ত্র তুমিও হইতে পার ! জন্ম-জন্মান্তরের দুঃস্বপ্নজাল ছিন্ন করিয়া বাহির হও ৷ জন্ম মরণ উভয়ই স্বপ্ন ৷

Swami Gokulananda

জপসাধনা

পরমার্থ পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য আমাদের নিজ নিজ ইষ্ট দেবতা থাকা দরকার ৷

আমার প্রিয়তম ইষ্টের ধ্যান কিভাবে করব ?

যোগ্য গুরুর কাছ থেকে সে উপায় আমাদের শেখা দরকার ৷ অসীম করুণাবশতঃ গুরু শিষ্যকে মন্ত্র দেন ৷ শিষ্যের কখনো মন্ত্রে শব্দভাবনা বা অক্ষরভাবনা করা উচিত নয় ৷ মন্ত্রের গূঢ় শক্তি আছে ৷ গুরুবাক্যে বিশ্বাস করে জপসাধনা চালিয়ে গেলে আমাদের ইষ্ট উপলব্ধি হয় ৷

তাহলে সিদ্ধ বীজমন্ত্র সহ ইষ্টদেবতা থাকলে আমাদের কি হয় ?

আমাদের ধরার মতো অধ্যাত্ম চেতনার কেন্দ্রবিন্দুটি আমরা তখন পাই ৷ বারবার আমাদের ইষ্টে ফিরে আসা দরকার ৷ এটি একান্ত প্রয়োজন ৷ নাম জপের সঙ্গে সঙ্গে গুরুনির্দেশিত পদ্ধতিতে আমরা যদি মন্ত্রের অর্থ চিন্তা করি, তাহলে সে জপ কার্যকর হয় ৷

পতঞ্জলির যোগসূত্রে বলা হয়েছে, “তজ্জপঃ তদর্থভাবনম্ ” — অর্থাৎ মন্ত্রের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য সম্বন্ধে আমাদের সর্বদা সচেতন থাকা উচিত ৷ একেবারে প্রথম অবস্থায় যদি মন্ত্রজপ নিতান্তই যান্ত্রিক ভাবে হয়, তাতে কিছু যায় আসে না ৷ পবিত্র নাম জপে হয়তো প্রথমে রুচি হবে না, কিন্তু তবুও জপ চালিয়ে যেতে হবে ৷ পরিণামে দেখব প্রভুর নামের স্বাদ কত মধুর ৷ সুতরাং প্রথম অবস্থায় অন্ধ বিশ্বাস নিয়ে অারম্ভ করলেও কিছু যায় আসে না ৷

জপ-সাধনা শব্দপ্রতীকের উপর জোর দেয়, কারণ শব্দ এবং চিন্তা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ৷ টাইপিষ্ট জানে যে টাইপ মেসিনের চাবির উপর যে বর্ণের চাবিতে সে চাপ দেয়, সেই বর্ণটি তৎক্ষণাৎ কাগজের উপর লেখা হয়ে যায় ৷ ঠিক সেই রকম ‘রাম’ বা ‘কৃষ্ণ’ বা ‘হরি’র নামরূপ যে শব্দপ্রতীক উচ্চারণ করি, সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রতীকের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত চিন্তা মনের সামনে ভেসে ওঠে ৷ এই চিন্তা অামাদের পরম লক্ষ্যে যাওয়ার পথে সাহায্য করে ৷

                                     — স্বামী গোকুলানন্দ ৷

Swami Lokeswaranandaji

ধ্যানের সময় আপনি যেদিকে মুখ করে বসে আছেন, ভাববেন আপনার ইষ্টও আপনার হৃদয়ে বসে সেই দিকেই চেয়ে আছেন ৷ উদ্দেশ্য একাঙ্গী হয়ে যাওয়া ৷ নিজেকে মুছে ফেলা ৷

সংখ্যা গুনে জপ করার কোনো দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না ৷ সাধারণত গুরু বলে দেন — এত সংখ্যক জপ নিয়মিত করবে ৷ তার মানে তিনি একটি নিয়ম করে দিলেন ৷ না বলে দিলে শিষ্য হয়তো কিছুই করবে না ৷ তাই একশো আট বা এক হাজার জপের কথা বলা ৷ আসলে জপ করাটাই মুখ্য ৷ সংখ্যা গোনার দিকেই যদি মন রইল তো ভগবানের চিন্তা হবে কী করে ?

জপের সঙ্গে সঙ্গে ধ্যান, অর্থাৎ ইষ্টচিন্তা খুব ভাল ৷ খুব কাজ হয় এতে ৷

মন দিয়ে জপ করলে ধ্যানও ভাল হয় ৷

ধ্যান আর কী ? ভালবাসার সঙ্গে তাঁকে চিন্তা করা, তাঁর কথা ভাবা ৷ আমরা আত্মীয়স্বজন, প্রিয় পরিজনের কথা ভাবতে খুব ভালবাসি ৷ তা ভগবান আমাদের সব চাইতে আপন ৷ তাঁর কথা ভাবতে ভাবতে তন্ময় হয়ে যাওয়াই ধ্যান ।

                             — স্বামী লোকেশ্বরানন্দজী ৷
Design a site like this with WordPress.com
Get started