letter of Swami Premeshanandaji’s collection

স্বামী প্রেমেশানন্দজীর পত্র-সংকলন হইতে :~
~~~~~~~~

নিত্য যে ঘটনা ঘটে তাহার সম্বন্ধে আমরা মোটেই সচেতন নই ৷ আমরা নিত্য তিন ঘরে ঘুরিয়া বেড়াই ৷

প্রথমে আমরা দেহঘরের সর্বত্র ঘুরিয়া তাহার পাঁচখানা জানালা দিয়া, ব্রহ্মকে ‘জগৎ’রূপে দেখিয়া সুখদুঃখ ভোগ করি ৷ তারপর শুধু মাথার ভেতর ঘুরিয়া বেড়াই এবং মৃদু আলোতে পূর্বদৃষ্ট বস্তুগুলি নানাভাবে সাজাইয়া সম্ভোগ করি ৷ অবশেষে মস্তিষ্কের পশ্চাদদিকে অবস্থিত, মেরুদণ্ডের মাথায়, অন্ধকার কক্ষে, শুধু অন্ধকার অনুভব করি ৷ এইরূপ অনেক দিন নিজেকে তিন অবস্থায় সাক্ষিরূপে চিন্তা করিতে করিতে আমি যে ‘অবস্থাত্রয় সাক্ষী’ তাহা বেশ বুঝতে পারা যায় ৷ তাতে মন সংসার হইতে একটু ‘আলগা’ হয় ৷

কিছুকাল এইরূপ চিন্তা করিয়া দেখ — ফল কি দাঁড়ায় ৷ মূল উদ্দেশ্য — ভিতরে ঢুকে পড়া ৷ আসল কথা — সংসার হইতে ভিতরের দিকে দৃষ্টি ফেরান ৷

কয়েকটি কথা বলি ৷

(১) সর্বাগ্রে শরীরটিকে সুস্থ করিবার চেষ্টা করিতে হইবে ৷ সম্ভব হইলে, একটু-আধটু ব্যায়াম করা কর্তব্য ৷ খাদ্য সম্বন্ধে খুব হুঁশিয়ার থাকিতে হইবে ৷

(২) অনেকক্ষণ ‘স্থির নিষ্পন্দ আসনে’ বসিয়া থাকার অভ্যাস করিতে হইবে ৷ খুব ধীরে ধীরে করা চাই ৷

(৩) খুব একটা পাকা রুটিন মতো চলা চাই ৷

(৪) যৎ করোষি ইত্যাদি শ্লোক অনুসারে সকল কর্মকেই তাঁর পূজা জানিয়া সর্বপ্রকার কর্ম করা দরকার ৷

(৫) দিবানিশি ঠাকুর-মা-স্বামীজীদের জীবনের ঘটনার চিন্তা করিবার জন্য ফাঁকে ফাঁকে ঐসব কথা আলোচনা, পড়া চাই ৷

(৬) তাঁদের ছবি এমনভাবে রাখা, যাতে উঠতে বসতে তাঁদের মূর্তি চোখে পড়ে ৷ ফটো তো তাঁদের ছায়া ৷ ফটো দেখিলে তাঁদের দর্শন মিলে ও মনে হয় যেন তাঁরা সঙ্গেই আছেন ৷

মোট কথা — জাতিতে ( সত্তায়, স্বরূপে ) শ্রীরামকৃষ্ণ,
চিন্তায় বিবেকানন্দ,
কর্মে মা সারদা হইতে হইবে ৷

এই সাধনা কঠিন নহে ৷ সময় দিতে হইবে ৷ ধৈর্য চাই অসীম ৷ শাস্ত্র পড়িয়া, বিচার করিয়া, বুদ্ধিতে সাধ্য নির্ণীত হইলে সব ঠিক চলে ৷ জ্ঞানলাভের উপায় — শ্রবণ, মনন, নিদিধ্যাসন ।

সর্বদা আলোচনা করিলে ‘বুদ্ধিযোগ’ যে লাভ হয় গীতায় তা সুস্পষ্ট লেখা আছে ৷

সমগ্র গীতা সম্পূর্ণরূপে কণ্ঠস্থ করা চাই-ই-চাই ৷

Prabrajika Mokshya Prana Mataji

প্রব্রাজিকা মুক্তিপ্রাণা মাতাজীর পত্রের কিছু অংশ :~
~~~~~~~~

🌟আধ্যাত্মিক পথে চলতে গেলে নিজের দম্ভ, দর্প, অভিমান, অহংকারকে ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ করতে হয় ৷

🌟সকলের সঙ্গে যতটা সম্ভব — সহজ-সরল ভাবে মেলামেশা করতে হয় ৷ তারা দু-চারটে বাজে কথা শোনালেও চুপ করে থাকলে তো গোলমাল হবে না ৷ শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন — সরল না হলে ঈশ্বরের পথে যেতেও পারে না, ঈশ্বরকে পেতেও পারে না ৷

🌟মানুষ যেমনই হোক তাকে ভালোবাসতে হয়, কারও প্রতি দ্বেষ, হিংসা রাখতে নেই — কারণ সেগুলো ফিরে ফিরে এসে তোমাকেই আবার কষ্ট দিতে থাকবে — তাতে তোমার জপের বিঘ্ন হবে ৷ যা-কিছু তোমার জপের বাধাস্বরূপ বলে মনে হবে তাকে তুমি সবলে উৎপাটন করবে ৷

🌟নিজের দৈনন্দিন তালিকাতে প্রত্যহ খাওয়া শরীররক্ষার জন্যই রাখবে ৷ যদি মাথা ঘোরে বা দুর্বল বোধ কর — খাওয়াটার দিকে নজর করবে, তাহলে দুর্বলতা আসবে না এবং জপধ্যান করতে কোনও অসুবিধা বোধ করবে না ৷ এই বয়সে হঠাৎ কঠোরতা করতে গেলে রোগ আক্রমণ করার সম্ভাবনা আছে ৷ একটা স্থায়ী রোগ যদি আসে তাহলে কী হবে — সেটার ভবিষ্যৎ ভেবে নিয়ে — তপস্যা ও কৃচ্ছসাধন কোরো ৷

🌟আধ্যাত্মিক পথ এতই কঠোর যে শাস্ত্র বলছেন — ‘ক্ষুরস্য ধারা নিশিতা দুরত্যয়া দুর্গং পথস্তৎ কবয়ো বদন্তি ৷’ আগেকার দিনে, খোলা লম্বা ক্ষুর লোকে ব্যবহার করত — তার ওপর দিয়ে হাঁটতে পা কেটে টুকরো টুকরো হত, রক্তে চারিদিক ভেসে যেত — এরজন্য, ‘কবয়ঃ’ — মানে যাঁরা ভগবান দর্শন করেছেন, তাঁরা বলছেন — পথ অতি দুর্গম, কঠোর ৷ ক্ষুরের ওপর দিয়ে চলার মতো ৷

🌟ধর্ম মানে ধর্মানুশীলন অর্থাৎ আত্মানুসন্ধান ৷ প্রতি পদক্ষেপে নিজেকে বিচার করতে করতে যেতে হয় — আমার আজকের আচরণ ঠিক হয়েছে ? কথা ঠিকমতো বলেছি তো ? আমার নিজের মনে ক্ষোভ নেই তো ? শ্রীঠাকুর বলছেন, “মনের ক্ষোভ-বাসনা না গেলে ঈশ্বরের পথে যাওয়া যায় না ৷”

🌟আমি বলি কি — মনকে ঝেড়ে-ঝুড়ে সাফ করে নাও ৷ সহজ সরল পথে চলো ৷ মন শুদ্ধ পবিত্র ভগবদ্ বিশ্বাসে ভরিয়ে রাখো — আনন্দে থাকো ৷

🌟শরীরকে যতটুকু খাদ্য দিলে সে ঠিকমতো চলে সেটুকু করতেই হবে, নাহলে সেও শোধ তুলবে এটা ভুলে যেও না ৷

Swami Visuddha andaji

🌷🌷 জয় ঠাকুর 🌷🌷

ধর্ম জিনিসটা শুধু আনুষ্ঠানিক নয়, ধর্ম একটা আস্বাদনের বস্তু ৷ এই আস্বাদনই আমাদের শ্রীভগবানের দিকে আকর্ষণ করে ৷ অনুভূতি না থাকলে ধর্ম শুকনো হতো ৷ ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের জীবন এই অনুভূতির একটা বড়ো দৃষ্টান্ত ৷

সত্যের যত দিক আছে, তিনি সব দেখেছেন ৷ ঈশ্বরের ভাব অনন্ত, কাজেই তাঁর জন্য সাধনা অনন্ত, ঈশ্বরলাভের পথও অনন্ত ৷ ঠাকুরের সাধনার শেষে সব সম্প্রদায়ের মানুষ তাঁর কাছে ছুটে এসে তাঁর অনুভূতির কথা শুনে অবাক হয়ে যেত । সত্য এক, কিন্তু তাকে ঠাকুরের মতো এতভাবে দর্শন ও অনুভূতি কেউ করেননি ৷ ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষ দর্শন করা, তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা ও ঘনিষ্ঠ আলাপ আর কারো কাছে এত বেশি শোনা যায়নি ৷ সিঁতির ব্রাহ্মসমাজে ত্রৈলোক্য, বিজয়কৃষ্ণ ও অন্যান্য ব্রাহ্মভক্তদের তিনি বলেছিলেন, “ঈশ্বরকে ব্যাকুল হয়ে খুঁজলে তাঁকে দর্শন হয়, তাঁর সঙ্গে আলাপ হয়, কথা হয়, যেমন আমি তোমাদের সঙ্গে কচ্ছি ৷ সত্য বলছি দর্শন হয় ।”

ঈশ্বরের স্বরূপ নিয়ে একটা দ্বন্দ্ব চলেছিল ঠাকুরের আগমনের পূর্ব থেকেই ৷ প্রত্যেক সম্প্রদায় দাবি করছিল তাদের ভাবটি শুধু সত্য, আর সব মিথ্যা ৷ সেই দুর্দিনে ঠাকুরের আবির্ভাব ৷ তিনি সনাতন হিন্দুধর্মের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করলেন, বললেন, যত মত তত পথ ৷ তাঁর সাধনা উপদেশে এই একটা মস্ত বিরোধ চিরদিনের জন্য মিটে গেছে ।

ঠাকুর হাতীর দৃষ্টান্ত দিলেন ৷ কজন অন্ধ ব্যক্তি একটা হাতীর কাছে এসে পড়েছিল ৷ কেউ তাদের বলে দিলে, এর নাম হাতী ৷ তারা হাতীর গা স্পর্শ করে দেখলে ৷ তাদের মধ্যে একজন বললে, হাতীটা থামের মতো, — সে কেবল হাতীর পা’টা ছুঁয়েছিল ৷ আর একজন বললে, হাতীটা কুলোর মতো, — সে হাতীর কানটা শুধু ছুঁয়েছিল ৷ বাকি যারা হাতীর শুঁড় বা লেজে হাত দিয়েছিল তারা অন্য রকম বলতে লাগলো ৷

তেমনি ঈশ্বর সম্বন্ধে যাঁর যে-রকম অনুভূতি, তিনি মনে করেছিলেন, — ঈশ্বর সেই রকম, অন্য কোনরকম নয় ৷ ঠাকুর গোটা হাতীটাকে দেখলেন, সবটা প্রত্যক্ষ করলেন, অনুভুতি করলেন ৷ ব্রাহ্মকে তিনি ব্রাহ্মভাবে রাঙিয়ে দিয়েছেন, শাক্তকে শাক্তভাবে, বৈষ্ণবকে বৈষ্ণবভাবে ৷ যে-ধর্মমতেরই লোক তাঁর কাছে আসতো, ঠাকুর তাকে তার নিজভাবেই রাঙিয়ে দিতেন ৷ তাই তো তিনি জগদ্ গুরু ৷

মাদ্রাজের একজন বড় পন্ডিতের সঙ্গে আমার দেখা হয় ৷ তিনি বললেন, “ঠাকুরের বাণী যেন মাথা ডিঙিয়ে একেবারে হৃদয়ে প্রবেশ করে ৷ তাই তো তাঁর কথা মাথা পেতে নিতে হয়, বিচার করে বুঝতে হয় না ৷”

তন্ত্র-সাধনের সময় তিনি ভৈরবী ব্রাহ্মণীর এবং বেদান্ত-সাধনের সময় তোতাপুরীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন ৷ বেদান্তের চরম সাধন তিনি মাত্র তিন দিনে শেষ করলেন — যা করতে গুরু তোতাপুরীর লেগেছিল দীর্ঘ চল্লিশ বছর ৷ তোতাপুরী অরূপের ধ্যান করতেন, শুধু অরূপেরই অনুভূতি ছিল তাঁর, ভৈরবী অদ্বৈত মানতেন না ৷ ভৈরবী ও তোতাপুরীর যেখানে যেটুকু অপূর্ণতা ছিল, ঠাকুরই তা পূরণ করে তাঁদের ধন্য করেছিলেন ৷

ঠাকুরের প্রত্যক্ষ দর্শনের কাছে সবাই চুপ হয়ে যেত ৷ একজন কাশীর কথা বই-এ পড়েছে, আর একজন কাশী দেখেছে, দুজনের মধ্যে ঢের তফাৎ ৷

ঠাকুর বললেন, “দয়া নয়, পরোপকার নয়, সর্বভূতে হরি রয়েছেন, তাঁরই সেবা ৷ এই সেবার মূলে যদি নামযশ প্রত্যুপকারের আশা কিংবা স্বর্গকামনা না থাকে, তবে তাই হলো গীতার নিষ্কাম কর্ম ৷

স্বামীজি পাঁচ-ছ’ বছর ধরে ঠাকুরকে সবরকমে বাজিয়ে নিয়েছিলেন ৷ একদিন লুকিয়ে তাঁর বিছানার নিচে একটা টাকা রেখে দেন ৷ সেই খাটে বসামাত্র ঠাকুর যেন বিছার কামড় খেয়ে ছটফট করতে থাকেন ৷ তখন স্বামীজি তাঁর পা-দুটি জড়িয়ে ক্ষমাভিক্ষা করেন ৷

গঙ্গার ধারে বসে ঠাকুর ‘টাকা মাটি, মাটি টাকা’ বিচার করে দুটোই গঙ্গার জলে ফেলে দিয়েছিলেন ৷ টাকাটা ফেলে দেওয়ার মানে বিষয়াকাঙ্খা ভোগবাসনা ত্যাগ করা, নিবৃত্তিমার্গ আশ্রয় করা ৷

ভোগবাসনাই তো মানুষকে সংসারে আবদ্ধ করে রেখেছে ৷ উপনিষদের ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য বললেন, ভোগের মধ্য দিয়ে অমৃতত্ত্ব লাভ করা যায় না ৷ এ-যুগে ঠাকুর আবার সেই অমৃতত্বের পথ দেখিয়ে গেছেন ৷ ত্যাগই আমাদের আদর্শ ৷ ঠাকুর ত্যাগীশ্বর, আর তাঁর সন্তানদের সকলেরই জীবন ত্যাগের জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত ৷

ঈশ্বরের সত্তায় আমরা টিকে আছি । তিনি আমাদের এত নিকট, এত কাছে, আর আমরা কিনা আমাদের প্রেম-প্রীতি ভালবাসা সব অন্যত্র বিলিয়ে বসে আছি ! এই ছড়ানো ভালবাসা-প্রেম-প্রীতিকে বিষয় থেকে গুটিয়ে এনে অন্তর্মুখী — ঈশ্বরমুখী করতে হবে ৷ জগদ্ গুরু শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর জীবন ও সাধনা দিয়ে এ-যুগে এই শিক্ষাই দিয়ে গেছেন ।

                                — স্বামী বিশুদ্ধানন্দজী ৷

Prabrajika Mokshya Prana Mataji

প্রব্রাজিকা মোক্ষপ্রাণা মাতাজীর পত্রের কিছু অংশ :~
~~~~~~~~

…সাধারণ কথায় লোকে বলে ‘ভগবানের মার দুনিয়ার বার ৷’ অবশ্য আমরা যতই ভগবানকে টানি না কেন — কর্মও আমাদের — কর্মফলও আমাদের — তাঁকে কর্মফলের মধ্যে টেনে নিয়ে খানিকটা দোষমুক্ত হতে চাই ৷

কর্ম তো করছি আমরা, আমাদের মনের মালিক আমরাই ৷ বাসনা-কামনা মনের মধ্যে কত কিছু তো বাসা বেঁধে আছে ৷ কোনটার কী ফলাফল তা আমরা কেউ জানি না ৷

কর্ম আমরাই করি — আমাদের মনের বাসনা-কামনা অনুযায়ী — কিন্তু তার সঙ্গে মনের আরোও কত কিছু বৃত্তি জুড়ে দিই, তার হদিস রাখি না ৷

এরজন্য শাস্ত্র বলছেন, তোমার মনের মালিক তো তুমিই সুতরাং যে কাজই কর না কেন — ভেবেচিন্তে করবে ৷

শ্রীশ্রীঠাকুর বলছেন, “সৎ, অসৎ বিচার করবে সর্বদা ৷”…

Swami lokeswaranandaji

মীরাবাঈ মধুরভাবের সাধিকা ছিলেন ৷ কৃষ্ণকে তিনি স্বামী বলে জানতেন ৷ সেই মীরাবাঈ এসেছেন বৃন্দাবনে ৷ শুনলেন রূপ গোস্বামী সেখানে আছেন ৷ মীরাবাঈ রূপ গোস্বামীর সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন ৷ রূপ গোস্বামী বলে পাঠালেন : না, নারীর সঙ্গে আমি দেখা করব না ৷—

গোসাঞি কহেন মুঞি করি বনে বাস ৷
নাহি করি স্ত্রীলোকের সহিত সম্ভাষ ৷৷

তখন মীরাবাঈ বলছেন : তাহলে আপনি কিছুই বোঝেন নি, কিছুই জানেন না আপনি ৷ যতক্ষণ আপনি নিজেকে পুরুষ ভাবছেন, ততক্ষণ বুঝতে হবে আপনি বৃন্দাবন-লীলা কিছুই বোঝেননি ৷ একমাত্র পুরুষ হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ ৷ বলছেন :

এত দিন শুনি নাই শ্রীমন্ বৃন্দাবনে ৷
আর কেহ পুরুষ আছয়ে কৃষ্ণ বিনে ৷৷

এই হচ্ছে মধুরভাব বা কান্তাভাব — আমরা সবাই নারী, পুরুষ একমাত্র শ্রীকৃষ্ণ ৷

                              — স্বামী লোকেশ্বরানন্দ ৷

Swami lokeswaranandaji

জ্ঞান_প্রদীপ

স্বামী লোকেশ্বরানন্দ :~

জ্ঞানই পবিত্রতম বস্তু ৷ জ্ঞানের চাইতে পবিত্র আর কিছুই নেই ৷ এই যে আমরা প্রদীপ জ্বালি, যাগযজ্ঞ করি, আগুন জ্বালি — এ কীসের জন্য ?

এর উদ্দেশ্য জ্ঞানের পূজা করা ৷ আমরা জ্ঞানের পূজা করি ৷ অগ্নি হচ্ছে সেই জ্ঞানের প্রতীক ৷ অগ্মি সমস্ত মলিনতা ভস্ম করে দেয়, নষ্ট করে দেয় ৷

আজ সকালেই এক জায়গায় গিয়েছিলাম ৷ প্রদীপ জ্বালা হলো ৷ বললাম — না, এ শুধু প্রদীপ নয় — ‘জ্ঞান-প্রদীপ’ ৷

মস্কোয় Institute for Oriental studies অর্থাৎ প্রাচ্যবিষয়ক চর্চার একটি কেন্দ্র আছে ৷ প্রথমবার ওঁরা যখন সেখানে আমাকে বক্তৃতা করতে নিয়ে গেলেন, ঢুকতেই দেখি একটি মহিলার মূর্তি — দেবী মূর্তি ৷ প্রদীপ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ৷

আমি ওঁদের জিজ্ঞাসা করলাম — এই প্রদীপ-ধরা মূর্তির অর্থ কী ? তা, কেউ বলতে পারলেন না — বলা উচিৎ ছিল ৷

যাই হোক, আমি বললাম — এই যে মূর্তি, প্রদীপ হাতে নিয়ে, এ যেন বলতে চাইছে — তুমি কি জিজ্ঞাসু ? জানতে চাইছ ? জ্ঞানলাভ করতে চাইছ ? তাহলে এসো, এই প্রদীপ তোমার জন্য ৷ তোমার হৃদয়ে যে প্রদীপ আছে, আমার এই প্রদীপ সেই প্রদীপটিকে জ্বালিয়ে দেবে ৷

Swami Brahmanandaji

খুব কর্ম করবে, আর কর্মের সঙ্গে ভগবানকে স্মরণ করবে ।

বিশ্বাস ভিন্ন কেউ ভগবানকে লাভ করতে পারে না । যে বিশ্বাস করতে শিখেছে, সে নিশ্চয়ই ভগবানকে পেয়েছে ।

যদি বিশ্বাস কর তবে কানাকড়িরও দাম আছে, আর যদি বিশ্বাস না কর তবে সোনার মোহরেরও দাম নেই ।

যাদের ভগবানে বিশ্বাস হয়নি, তারা এটা ওটা বাছে ; আর যাদের ভগবানে পাকা বিশ্বাস হয়েছে, তাদের সব সংশয় চলে গেছে ।

ত্যাগ না করলে ভগবানে ভক্তি আসে না । ত্যাগ নিশ্চিত চাই । ত্যাগ হচ্ছে — অহঙ্কারটা নষ্ট করা ৷

কতকগুলো লোক বলে — এই নাম না ভজলে হবে না, তুমি যে নাম বলছ তা ভুল ৷ কার ভুল আর কার বা ঠিক !

এই ক্ষুদ্র মন-বুদ্ধি নিয়ে তোমার ভুল, আমার ঠিক — এই গণ্ডগোলে কাজ কি ?

মিথ্যে হতে হয় সব মিথ্যে, আর সত্যি হতে হয় সব সত্যি ৷ একবার তলিয়ে বুঝলে তো সব বোঝা যায় ৷

যার যে নাম ভাল লাগে সে তাই করুক না — তাতে কারুর আপত্তি হতে পারে না ৷

                                 — স্বামী ব্রহ্মানন্দজী ৷

Prabrajika Mokshya prana mataji

প্রব্রাজিকা মোক্ষপ্রাণা মাতাজীর পত্রের কিছু অংশ :~
~~~~~~~~

যাঁর অঙ্গুলি হেলনে কোটি কোটি ব্রহ্মাণ্ডের সবকিছু ঘটছে, আমি একটা তুচ্ছ সামান্য মানুষ সেখানে কে ? যিনি তোমার হৃদয়গুহায় প্রতিষ্ঠিত তিনিই সময়মতো লেখাপড়াও করালেন, আবার ঘর ছাড়ার আহ্বানও জানালেন ৷

“সকলই তোমারি ইচ্ছা — ইচ্ছাময়ী তারা তুমি ৷
তোমার কর্ম তুমি করো মা / লোকে বলে করি আমি ৷”

সুতরাং ওই ইচ্ছাময়ী-তারার শ্রীচরণে নিজেকে নিবেদন করার চেষ্টা করো ৷ তিনি যা করার করবেন ৷ করছেন তিনি — আমরা বাহাদুরির জন্য লালায়িত ৷…

শ্রীশ্রীমা কত দিন ধরে, কত জন্ম ধরে তোমায় প্রস্তুত করছেন, তা তুমিও জান না, আমিও না ৷ এখন মনে হয় যেন এক কথায় সব ব্যবস্থা হয়ে গেল ৷…তাঁর ব্যবস্থা সব করা আছে আগে থেকে, তাই এত সহজে কাজ হয়ে গেল ৷

শ্রীশ্রীমাকে ধরে থাকবে প্রাণপণে, সর্ব অবস্থায় ৷…

Swami lokeswaranandaji

যাত্রাআমাদেরএকই_পথে

স্বামী লোকেশ্বরানন্দ :—

সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র ( চট্টোপাধ্যায় ) তখন রেঙ্গুনে ৷ রেঙ্গুনে আমাদের মঠ-মিশনের দুটি কেন্দ্র ছিল ৷ তা মাঝে মাঝেই মাদ্রাজ মঠ থেকে স্বামী রামকৃষ্ণানন্দকে রেঙ্গুনে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে যাওয়া হতো ।

একদিন ভোরে স্বামী রামকৃষ্ণানন্দজীকে হনহন করে যেতে দেখে শরৎচন্দ্র তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন — এত সকালে এমন ব্যস্ত হয়ে কোথায় চলেছেন, মহারাজ ?

শশী মহারাজ বললেন — শুনেছি,…. বাবুর বাগানে কিছু সুন্দর ফুল ফুটেছে ৷ তা যাচ্ছি সেই ফুলের সন্ধানে ৷ ঠাকুর ঐ ফুল খুব ভালবাসতেন কিনা ৷

শরৎচন্দ্র সব শুনে বললেন — ফুলের দরকার হয় তো সে ফুল বাজারেই রয়েছে । কিনে নিলেই তো হয় ৷

এই কথায় শশী মহারাজ মৃদু হেসে বলেছিলেন — যা-কিছু করি সবই তো ফাঁকি ৷ এই সুযোগে শুধু তোমারেই ডাকি ৷

অর্থাৎ, বারবার ঈশ্বরকে স্মরণ করা, তাঁকে ভালবাসা, আপনার জন জেনে তাঁর কথা চিন্তা করা — এইটিই দরকার ৷ এইটি যদি সহজে এসে গেল, তাঁর ওপর ভালবাসা জন্মে গেল, তাহলে আর বাকিটা রইল কী ?

শ্রীমকেও দেখেছি এই রকম ৷ নিজে অন্য কোনো আলোচনা তো করতেনই না, দেখেছি অপর কেউ ওঁর সামনে অন্য বিষয়ের আলোচনা শুরু করলে তৎক্ষণাৎ তিনি ঐ আলোচনার মোড় ঈশ্বরের দিকে ঘুরিয়ে দিতেন ।

আমাদের গোটা জীবনটাই যেন একটা অন্বেষণ, একটা খোঁজা ৷ আমরা খুঁজে চলেছি ঈশ্বরকে, আনন্দকে, আমাদের আপন সত্তাকেই ; শুধু জানি না কোথায় গেলে সেই বস্তু পাব ৷ ছুটছি নানা জায়গায় ৷ ঘুরছি, ফিরছি — কিন্তু বস্তু মিলছে না ৷

ঐ যে গানে আছে না — ‘নাভিকমলমে হ্যায় কস্তুরী’ ৷ আমাদের অবস্থাও ঐ হরিণের মতো ৷ হরিণ একটা তীব্র, অপূর্ব সুগন্ধের উৎস ছোটাছুটি করে খুঁজে বেড়াচ্ছে ; কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছে না, ঐ গন্ধ তার শরীর থেকেই, তার নাভির মধ্য থেকেই বেরোচ্ছে । সেই রকম আমরাও বুঝতে পারছি না — আমি কে ? আমার প্রকৃত স্বরূপ যে ব্রহ্ম, সেই সত্য ভুলে বসে আছি, আর ঈশ্বরকে খুঁজছি বাইরে ।

letter from Swami Premeshanandaji’s collection

স্বামী প্রেমেশানন্দজীর পত্র-সংকলন হইতে :~
~~~~~~~~

মঠ শ্রীশ্রীঠাকুরের স্থান ; মঠ প্রতিষ্ঠিত হইবার পূর্বেই শ্রীশ্রীমাঠাকুরানী দেখিতেন, ঐ জমিতে শ্রীশ্রীঠাকুর ঘুরিয়া বেড়ান, আশ্চর্য ব্যাপার নয় কি ?

তুমি সেই মঠেই আছ — আর “গঙ্গার পশ্চিমকূল বারানসী সমতুল” ৷

খাদ্যবস্তুর উপর কর্মপটুতা যে নির্ভর করে — ভারতবর্ষে এই তত্ত্ব এখনও অজ্ঞাত ৷ এখানে সবই spiritual. তুমি খাদ্যের দিকে দৃষ্টি রাখিও ৷

Design a site like this with WordPress.com
Get started