Swami Premeshanandaji’s collection

যখন যে অবস্থায় পড়া যায়, সেখানকার সাথে খাপ খাওয়াইয়া লওয়াই কর্তব্য। একটা রুটিন করিয়া খুব হুঁশিয়ার ভাবে চলিলে তোমার জীবনের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হইয়া উঠিতে পারে। জীবনটাকে সমাজের উন্নতির কার্যোপযোগী করিয়া তুলা সর্বাগ্রে কর্তব্য। তারপর নিষ্কাম ভাবে সেই কার্য সারাজীবন করিলে মুক্তি পর্যন্ত লাভ হইবে। রুটিন করিয়া প্রতিদিন সার্থক করিয়া তুল, প্রতি ক্ষণ সার্থক করিয়া তুল। সম্মুখে অনন্ত কাল আছে। দেহ কতবার জন্মেছে মরেছে। এইবার যদি শ্রীরামকৃষ্ণ-চরণে জীবনের সকল কার্য, সকল আশা আকাঙ্ক্ষা সমর্পণ করিতে পারো, তবে সকল দুঃখ চিরকালের জন্য দূর হইবেই হইবে।

সম্মুখে শ্রীরামকৃষ্ণ-আদর্শ স্থাপন করিয়া জীবনটাকে এই ছাঁচে গড়িয়া তুলিতে হইবে। তাহা সহজ নহে এবং কঠিনও নহে। ….

—- স্বামী প্রেমেশানন্দ

Swami Premeshanandaji’s collection

টাকা-পয়সা বস্তুতই গোলমেলে। এইসব হিজিবিজিগুলি না থাকিলেও জীবন চলে না। নির্ঝঞ্ঝাট জীবন বিস্বাদ হইয়া পড়ে; তাই আমরা, সন্ন্যাসীরা, নানা গোলমাল নিজেই বাধাই ও পস্তাই, দুঃখ করি, অভিমান করি। তোমার বুদ্ধি কম বলিয়া তুমি মার খাইবেও কম; আমার বুদ্ধি বেশি, তাই মারও খাইব বেশি। মার খাওয়া সকলের জন্যই আছে। শ্রীরামকৃষ্ণকেও মার খাইতে হইয়াছিল। এই জগতে কারও নিস্তার নাই। তাই অহর্নিশি শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ চরণাশ্রয় ব্যতীত আর কোনও শান্তির উপায় দেখিতেছি না। এই সংসার পেত্নীর মতো আমাদের ঘাড়ে চাপিয়াছে— ইহাকে ঘাড় হইতে নামাইবার একমাত্র উপায় রামকৃষ্ণনাম স্মরণ। তা না হইলে এই বৃথা শ্রম, বৃথা দুশ্চিন্তা, বৃথাই বাঁচিয়া থাকা। কাশীতে গিয়া বিশ্বনাথের চরণে মাথা লুটাইয়া বারবার প্রার্থনা করিও যেন রামকৃষ্ণ চরণে একটু ভক্তি হয়। তা না হইলে আর রক্ষা নাই।

—- স্বামী প্রেমেশানন্দ

Swami Premeshanandaji’s collection

অসুখটা হয়তো ভালোর জন্যই হইয়াছে। ব্যাধি জীবাত্মার অগ্রগতির, অনেক সময়ই সাহায্য করিয়া থাকে। ব্যাধি হইতে স্বভাবতই মন নিজের দেহে গুটাইয়া আসে। মানুষ নিজের চিন্তা করিতে চায় না। যা কিছু ভাবে সবই Object সম্বন্ধে; Subject যে আছে, তার খবরই রাখে না। সুযোগ মতো দীক্ষা নিও, ব্যস্ত হইবার, দুঃখিত, চিন্তিত হইবার কোন কারণ নাই। তুমি নিশ্চিন্ত থাকো তোমার ‘জিত’ হইবেই। ‘চির দিনের সূর্য মেঘ দু-দিনের’।

—- স্বামী প্রেমেশানন্দ

Swami Premeshanandaji’s collection

সর্বভূতে ব্রহ্ম তো স্বরূপে বিরাজ করেন না, ভালোমন্দ উভয় সাজে সেজে থাকেন। তাহার সাজও তো স্বীকার করিতে হয়, তা না হলে ব্যবহার চলবে কিরূপে? মন্দকে মন্দ বলিয়া না জানিলে কত যে বিপদের সম্ভাবনা, তা কি জানো না? সবই যদি ব্রহ্ম, তবে বাপ, মা, ভাই, বন্ধু ছেড়ে এতে কেন? ছাদে উঠে গেলে, তবে তো জানা যাবে, “যাতে হয় ছাদ, তাতেই হয় সিঁড়ি?”

—- স্বামী প্রেমেশানন্দ

letter from Swami Turiyanandaji

স্বামী তুরীয়ানন্দজীর পত্র হইতে :~
~~~~

শঙ্করাচার্যের ‘প্রশ্নোত্তরমালা’ পড়িলে দেখিবে এই প্রশ্ন আছে —
“কো বা গুরুর্যো হি হিতোপদেষ্টা ৷
শিষ্যস্তু কো যো গুরুভক্ত এব ৷৷”

অর্থাৎ গুরু কে ? না — যিনি হিতোপদেশ করেন ৷

আর শিষ্য কে ? না — যে গুরুভক্ত, কিনা গুরুর আদেশ প্রতিপালন করেন এবং সেবাদিতে তৎপর থাকেন ৷

হিত মানে পরমার্থ, এবং অহিত মানে এই সংসার ৷

যিনি ভগবানের দিকে লইয়া যান এবং বাসনারূপ সংসারের নিবৃত্তি করেন, তিনিই গুরু আর যে এইরূপ উপদেষ্টার কথা শোনে এবং তাঁহার পরিচর্যা করে, সেই শিষ্য ৷

গুরু ও শিষ্যের সম্বন্ধ পারমার্থিক পিতা-পুত্র-ভাব ৷ জন্মদাতা পিতা জন্ম দেন ; গুরু জন্মমরণ হইতে উদ্ধার করেন — পরমপদ দেখাইয়া ৷

পিতৃঋণ সন্তানোৎপাদন ও শ্রাদ্ধাদি দ্বারা শোধ করা যায় ; কিন্তু গুরু অবিদ্যা হইতে পার করেন বলিয়া তাঁহার ঋণ শোধ করা যায় না — সর্বস্ব অর্পণ করিয়াও না ৷

যে শব্দ বা নাম মনকে বিষয় হইতে ত্রাণ করিয়া ভগবানের দিকে লইয়া যাইতে পারে, তাহাকে মন্ত্র কহে ৷

মন্ত্রগ্রহণের তাৎপর্য, যে মন্ত্র গৃহীত হইবে তাহার অনুষ্ঠান সাহায্যে মনকে বিষয় হইতে পরিত্রাণ করিয়া শ্রীভগবানের পাদপদ্মে স্থাপন করা — ইহাই মনুষ্যজীবনের উদ্দেশ্য ৷

ইহা করিতে পারিলে নরদেহধারণ সার্থক ও ধন্য হয়, আর ইহা না করিতে পারিলে শৃগাল কুক্কুরের ন্যায় আহার, নিদ্রা ও মৈথুনাচরণ করিয়া পুনঃ পুনঃ জন্মমরণের অধীন হইয়া কখন মানুষ, কখন পশু অথবা পক্ষী, নয়তো গাছ, পাথর প্রভৃতি হইয়া এই মহামায়ার চক্রমধ্যেই — যাহাকে সংসার বলে — অনাদি অনন্ত কাল ভ্রমণ করিতে হয় ৷

ভগবান গীতায় তাই কৃপা করিয়া উপদেশ করিয়াছেন —
“অনিত্যমসুখং লোকমিমং প্রাপ্য ভজস্ব মাম্ ৷”

— এই অনিত্য ও দুঃখময় সংসারে আসিয়া এক আমারই ভজনা কর ; নতুবা দুঃখভোগ অনিবার্য ৷

Swami Yatiswaranandaji Maharaj’s spiritual lesson

স্বামী যতীশ্বরানন্দের পুণ্যস্মৃতি :~
~~~~

প্রব্রাজিকা সারদাপ্রাণা :—

আমরা কখনও কখনও নিজেদের সুখ-দুঃখ, নানা সমস্যার কথা, অধ্যাত্মপথের নানা বাধাবিপত্তির কথা, পূজ্যপাদ মহারাজের কাছে বলতাম ৷ প্রায় সব ক্ষেত্রেই সমাধান আসত চিরপরিচিত কয়েকটি শব্দের মধ্য দিয়ে ৷ “জপ করো, জপ করো, প্রার্থনা জানাও, তাঁর ধ্যান করো আর কথামৃত পড়তে থাকো ৷”

একদিন ওইরকমভাবে মহারাজকে বলতে শুনে আমাদের মধ্যে একজন অসহিষ্ণুভাবে বলে ওঠে, “মহারাজ, আপনি সর্বক্ষণ বলেন — জপ করো, জপ করো, প্রার্থনা করো ৷ এছাড়া আর কিছু কি আপনি জানেন ?”

একথা বলতে শুনে পূজ্যপাদ মহারাজ খুবই গম্ভীরভাবে অথচ এতটুকু অসন্তোষ প্রকাশ না করে উত্তর দিলেন, “কী করব বলো ? ও ছাড়া যে আর কিছু নেই ৷ একমাত্র ওটাই শান্তির পথ বলে জানি ৷ ধ্যানধারণা, প্রার্থনা করা ছাড়া অন্য পথ কোথায় ? আর আমি যা জানি তোমাদের সকলকে সেটাই আয়ত্ত করতে বলি !”

বাস্তবিক, অধ্যাত্মপথের পথিককে এই কথার গভীর মর্মার্থ ক্রমে ক্রমে উপলব্ধি করতেই হয় ৷

পূজনীয় মহারাজ চিঠিতে লিখেছিলেন, “জপধ্যান হল শ্রেষ্ঠ তপস্যা এবং সাধন ৷ জপধ্যান সাধকের মনকে জাগতিক বিষয় থেকে সরিয়ে আনে ৷”

কথামৃত পাঠের প্রসঙ্গে মহারাজ বলতেন, “কথামৃত পাঠ করতে করতেই ধ্যান করবে ৷ কথামৃতের গভীরে ডুব দাও — শ্রীরামকৃষ্ণের যে জ্যোতির্ময় আনন্দময় সত্তা তার ধ্যানে মগ্ন হও ৷”

Swami Premeshanandaji’s collection

অন্তর্জগতের প্রকৃত উন্নতি ‘সময়মূল্যে’ কিনিতে হয় হে। বহু সময় ব্যয় না করিলে কোনও উপকার লক্ষ্য করা যায় না। কত লক্ষবার নানা দেহ ধারণ করিয়া কেবল ‘দৃশ্য’ দেখিয়া বেড়াইয়াছি— দৃষ্টা ‘আমিটি’ যে উপবাসে মরিতেছে তাহা একবারও ভাবি নাই। আজ অন্তরের দিকে তাকাইতে পারি না, ওদিকে মুখ ফিরাইলেই যেন কি এক প্রবল শক্তি ঘাড় ধরিয়া জগতের পানে চাহিতে বাধ্য করে। ‘নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্যঃ। দীর্ঘকাল, অবিরাম, পরম আগ্রহের সহিত অভ্যাস করিতে জ্ঞানীরা পরামর্শ দিয়া থাকেন।

তুমি যখনই অবসর পাবে, কোনও না কোনও বই পড়িও। আমাদের সকল কাজই তাঁর পূজা’—এই কথাটা মনে থাকিলে মন খুব প্রফুল্ল থাকে।

—- স্বামী প্রেমেশানন্দ

Swami Premeshanandaji’s collection

বন্ধুবান্ধবের চিন্তা পরিত্যাগ কর। মনকে নিজের হাতে নিয়ে এস। মন যে কত বাহিরে ছড়াইয়া রাখিয়াছ তাহা তুমি কি বুঝিতেছ না? প্রবল রাজসিক বৃত্তি নিত্য তোমার মনে শত কল্পনার সৃষ্টি করিয়া তোমার কি পরিমাণ শক্তি হরণ করিতেছে তাহা যদি না বুঝিয়া থাক তবে বুঝিবার চেষ্টা কর। এইভাবে চলিলে সংসারের কোন কাজে লাগিবে না। নিজের আধ্যাত্মিক উন্নতি কিছুই করিতে পারিবে না।

বঙ্কিমচন্দ্র বাঙালি ছেলেকে পলাশ ফুলের সঙ্গে তুলনা করিয়াছেন। যখন গাছে ফোটে—রক্তবর্ণ ফুল, তখন চারিদিক আলো করে। তারপর ক্রমে ফল হয়, ফল পাকে। চৈত্র মাসের রৌদ্র তাপে ফল ফাটিয়া অল্প একটু তুলা বাতাসে কোথায় উড়াইয়া নেয় তার সন্ধান মিলে না। সর্বদা এইরূপ দেখিতেছি।

নিজেকে নিজের কাজে যদি লাগাইতে চাও সমগ্র চিত্তকে নিজের মধ্যে গুটাইয়া লও। তাহাতেই জগতের, বন্ধু-বান্ধবের বেশি কল্যাণ হইবে। কিছুকাল বাহিরের জগৎ হইতে retire কর।

—- স্বামী প্রেমেশানন্দ

Swami Premeshanandaji’s collection

আনন্দ ভিতরে। কোনও মনোহর বাহ্য বিষয় দ্বারা ভিতরের আনন্দকে উত্তেজিত করিয়া আমরা অনুভব করি। কিন্তু যোগী ব্যক্তি self-কে শরীর-মন-বুদ্ধি- অহঙ্কার হইতে আলাদা করিয়া ভিতরের আনন্দ অনুভব করিয়া আত্মারাম হন। বাহিরের অবস্থা সকলের সমান। জ্ঞানীও শরীর জ্ঞানে পশুর সমান কিন্তু তিনি শরীর হইতে সরিতে পারেন। আমরা পারি না। অতএব অবসর পাইলেই সকল আনন্দ সকল শক্তির মূল self-কে ধরিবার জন্য মনকে হৃদয়ের ভিতরে স্থির করো, স্তম্ভিত করো। নতুবা ছোট বড়ো দুঃখ, সুখ কিছুতেই কমিবে না।

—- স্বামী প্রেমেশানন্দ

lesson from Swami Yatiswaranandaji

মনশান্তরাখার_পদ্ধতি

~~~

স্বামী যতীশ্বরানন্দ :—

চঞ্চল মনকে নিয়ন্ত্রণে এনে একমুখী করা সবচেয়ে দুরুহ ব্যাপার ৷ ছাত্রাবস্থায় আমাদেরই একজন স্বামী ব্রহ্মানন্দের নিকট অনুযোগ করে, “আমার মন এখনো চঞ্চল । কেমন করে তা শান্ত করা যায় ? মনে হয় এজন্য আমার সকল সংগ্রামই ব্যর্থ হয়েছে । এখন এ সকল আমার কাছে অবাস্তব বলে মনে হচ্ছে ৷”

উত্তরে স্বামী ব্রহ্মানন্দ বলেন : “এতে দুঃখ করার কোন কারণ নেই ৷ ধ্যানের ফল অবশ্যম্ভাবী আর যদি ভক্তি ও বিশ্বাস সহকারে জপ ধ্যান কর তবে ফল লাভ হবেই ৷

সবচেয়ে সহজতম ধ্যান, যেমন কোন দেবতার নাম উচ্চারণ করার অভ্যাসও যদি নিয়মিত করতে পার তবে নিশ্চয়ই মনে শান্তি পাবে ৷

প্রাথমিক পর্যায়ে ধ্যান করা যেন মনের সঙ্গে যুদ্ধ করা ৷ অশান্ত মনকে সংযত করে ইষ্টের পায়ে লগ্ন করা প্রচন্ড আয়াসসাধ্য ৷ প্রথম প্রথম সতর্ক থেকো যেন ধ্যান করতে গিয়ে মস্তিষ্কের উপর বেশি চাপ না পরে ।

নিয়মিত অভ্যাসে ক্রমে ক্রমে ধ্যানের মাত্রা দীর্ঘ করতে পারলে মনের স্থৈর্য আসে এবং তখন বেশি সময় ধ্যান করলেও ক্লান্তি বোধ হয় না ৷ এতে স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় এবং গভীর নিদ্রার পর দেহ ও মনে যেমন সাচ্ছন্দ্য ফিরে আসে সেই রকম স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হবে । ক্রমে গভীর আনন্দের অনুভূতি লাভ করবে ৷

দেহ অসুস্থ হলে মনেরও বিশৃঙ্খলা ঘটে ৷ সুতরাং শরীর সুস্থ রাখার জন্য পথ্য গ্রহণে বিশেষ সতর্ক হওয়া দরকার ৷ ধ্যানের জন্য মনের একাগ্রতা আবশ্যক ৷ অধিক পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করলে মনের জড়তা আসে ৷ মানসিক স্থৈর্য বজায় রাখতে সবরকম আবেগ বা আসক্তিকে সংযত রাখবে ৷ ধ্যান না করলে মনকে স্ববশে রাখতে পারবে না, আর মনকে স্ববশে না রাখলে ধ্যান করাও হয়ে উঠবে না ৷

যদি মনে কর প্রথমে মনকে বশে আনার কৌশল আয়ত্ত করি, পরে ধ্যান অভ্যাস করব তবে অধ্যাত্ম জীবনের পথও খুঁজে পাবে না ৷ মনকে বশে আনা ও ধ্যান করা দুটো কাজই এক সঙ্গে চালিয়ে যেতে হবে ৷ সুতরাং মন সংযত কর আর ধ্যান করতে থাক ৷”

Design a site like this with WordPress.com
Get started