স্বামী তুরীয়ানন্দজীর পত্র হইতে :~
~~~~
শঙ্করাচার্যের ‘প্রশ্নোত্তরমালা’ পড়িলে দেখিবে এই প্রশ্ন আছে —
“কো বা গুরুর্যো হি হিতোপদেষ্টা ৷
শিষ্যস্তু কো যো গুরুভক্ত এব ৷৷”
অর্থাৎ গুরু কে ? না — যিনি হিতোপদেশ করেন ৷
আর শিষ্য কে ? না — যে গুরুভক্ত, কিনা গুরুর আদেশ প্রতিপালন করেন এবং সেবাদিতে তৎপর থাকেন ৷
হিত মানে পরমার্থ, এবং অহিত মানে এই সংসার ৷
যিনি ভগবানের দিকে লইয়া যান এবং বাসনারূপ সংসারের নিবৃত্তি করেন, তিনিই গুরু আর যে এইরূপ উপদেষ্টার কথা শোনে এবং তাঁহার পরিচর্যা করে, সেই শিষ্য ৷
গুরু ও শিষ্যের সম্বন্ধ পারমার্থিক পিতা-পুত্র-ভাব ৷ জন্মদাতা পিতা জন্ম দেন ; গুরু জন্মমরণ হইতে উদ্ধার করেন — পরমপদ দেখাইয়া ৷
পিতৃঋণ সন্তানোৎপাদন ও শ্রাদ্ধাদি দ্বারা শোধ করা যায় ; কিন্তু গুরু অবিদ্যা হইতে পার করেন বলিয়া তাঁহার ঋণ শোধ করা যায় না — সর্বস্ব অর্পণ করিয়াও না ৷
যে শব্দ বা নাম মনকে বিষয় হইতে ত্রাণ করিয়া ভগবানের দিকে লইয়া যাইতে পারে, তাহাকে মন্ত্র কহে ৷
মন্ত্রগ্রহণের তাৎপর্য, যে মন্ত্র গৃহীত হইবে তাহার অনুষ্ঠান সাহায্যে মনকে বিষয় হইতে পরিত্রাণ করিয়া শ্রীভগবানের পাদপদ্মে স্থাপন করা — ইহাই মনুষ্যজীবনের উদ্দেশ্য ৷
ইহা করিতে পারিলে নরদেহধারণ সার্থক ও ধন্য হয়, আর ইহা না করিতে পারিলে শৃগাল কুক্কুরের ন্যায় আহার, নিদ্রা ও মৈথুনাচরণ করিয়া পুনঃ পুনঃ জন্মমরণের অধীন হইয়া কখন মানুষ, কখন পশু অথবা পক্ষী, নয়তো গাছ, পাথর প্রভৃতি হইয়া এই মহামায়ার চক্রমধ্যেই — যাহাকে সংসার বলে — অনাদি অনন্ত কাল ভ্রমণ করিতে হয় ৷
ভগবান গীতায় তাই কৃপা করিয়া উপদেশ করিয়াছেন —
“অনিত্যমসুখং লোকমিমং প্রাপ্য ভজস্ব মাম্ ৷”
— এই অনিত্য ও দুঃখময় সংসারে আসিয়া এক আমারই ভজনা কর ; নতুবা দুঃখভোগ অনিবার্য ৷